আমাদের আজকের আয়োজন কাম বাসনা দূর করার উপায় বা কাম বাসনা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে। কাম বাসনা বা যৌন ইচ্ছা প্রাকৃতিক একটি অনুভূতি। ছেলেরা মেয়েদের প্রতি আর মেয়েরা ছেলেদের প্রতি আকর্ষীত হবে এটাই নিয়ম। তবে এই আকর্ষণ বা কাম বাসনা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাভাবিক কাম বাসনা থাকা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু যখন কাম বাসনা অতিরিক্ত হয়ে পড়ে বা দৈনন্দিন জীবনে নানা ভাবে বাধা সৃষ্টি করে তখনই চিন্তার বিষয় হয়ে পড়ে। অবিবাহিত যৌবনে এ ধরনের সমস্যা বেশি পড়তে হয়। আজকে আমরা আলোচনা করতে চলেছি, কি ভাবে কাম বাসনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেয়া যাক, কাম বাসনা দূর করার উপায় :-
কাম বাসনা কি
কাম বাসনা হলো শারীরিক ও মানসিক আকাঙ্ক্ষা যৌন অনুভূতির সাথে জড়িত। কামবাসনা বলতে সাধারণত যৌন ইচ্ছাকে বোঝায়। কাম বাসনা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হলেও অতিরিক্ত কাম বাসনা সমাজের জন্য সমস্যা তৈরি হতে পারে। আত্মশুদ্ধির দৃষ্টিতে কাম বাসনাকে মানসিক সমস্যা বলে মনে করা হয়। কাম বাসনাকে মানসিক রোগ বলেও মনে করা হয়। একে এশকে মাজাজি বলা হয়। এশকে মাজাজি অর্থ হলো নিষিদ্ধ প্রেম,অনাকাঙ্ক্ষিত আকর্ষণ ইত্যাদি।

কাম বাসনা দূর করার উপায়
ধ্যান বা মেডিটেশন
ধ্যান বা মেডিটেশন কাম বাসনা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি মানুষের মনকে শান্ত করে ও চিন্তা নিয়ন্ত্রণে সাহায্যও করে। নিয়মিত ধ্যান করে মনকে শান্ত করুন এবং কাম বাসনাকে তীব্রভাবে কমিয়ে নিন।
কাজ করার অভ্যাস করুন
গুনিরা বলেন, “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা”। কোনো কাজ ছাড়া সারাদিন বসে থাকলে নানা ধরনের বাজে চিন্তা আসবে এটাই স্বাভাবিক। নিজেকে যে কোনো উৎপাদনশীল কাজে ব্যস্ত রাখুন। নিজের মনকে অন্য কোনো চিন্তা বা কাজে ব্যস্ত রাখলে কাম বাসনা কমে যাবে।
শারীরিক ব্যায়াম
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করলে শরীরে এন্ডোরফিন হরমোন বেড়ে যায়। যা শরীরে আত্মনির্ভরশীল করে তুলে। নিজের প্রতি বিশ্বাস বেড়ে যায়। এতে মানসিক চাপ কমে কাম বাসনা কমাতে সহায়তা করে।
সৎ সঙ্গ
কথায় আছে সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস অসৎ স্বর্গে সর্বনাশ। বাজে স্বভাব বা খারাপ আচরণ থেকে বাঁচার জন্য সৎ সঙ্গ গড়ে তুলতে হবে। সবার সমানে থাকার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বন্ধু বান্ধব বা পরিবার সবার সাথে খোলা মেলা আলোচনা করুন। একা থাকা বন্ধ করুন।
খারাপ চিন্তা পরিহার
সবসময় খারাপ চিন্তা বা কাম বাসনা নিয়ে চিন্তা ভাবনা বন্ধ করুন। ভালো কাজে নিজেলে ব্যস্ত রাখুন।অনলাইনে খারাপ ভিডিও বা খারাপ গল্প পড়া থেকে বিরত থাকুন। দেখে আকর্ষিত হতে পারেন এমন ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলুন।
আরও পড়ুন:- স্ত্রীকে দ্রুত তৃপ্তির ৬টি উপায়
সঠিক খাদ্যভ্যাস
কাম বাসনা দূর করার উপায় হিসেবে সঠিক খাদ্যভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন কিছু বিশেষ খাবার আছে যা আমাদের কাম বাসনাকে বাড়িয়ে দেয়। এমন খাবার গুলো কিছুদিন এড়িয়ে চলুন।যেমন: খেজুর, কিচমিচ, দুধ, হাঁসের ডিম ইত্যাদি। এসবের পরিবর্তে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করুন। এতে ধীরে ধীরে কাম বাসনা কমে যাবে।

আত্মনিয়ন্ত্রণ
নিজেকে কন্ট্রোলে রাখা সবচেয়ে কঠিন কাজ। যে ব্যক্তি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে সেই সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি। কাম বাসনা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আত্মনিয়ন্ত্রণ। ধৈর্য্য ধারন করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন।
মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন
কাম বাসনা দূর করার উপায় হলো মানুষের প্রতি সম্মান রাখা। নিজেদের মা বোনের মতো সবাইকে সম্মানের চোখে দেখা। কারো প্রতি কুচিন্তা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। যথাসম্ভব আকর্ষিত হতে পারেন এমন ব্যক্তি থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
খারাপ কনটেন্ট থেকে দূরে থাকুন
সোশ্যাল মিডিয়া বা ইন্টারনেটে অশ্লীল কনটেন্ট দেখা থেকে বিরত থাকুন।এসব খারাপ ভিডিও আমাদের মনে খারাপ চিন্তা করতে বাধ্য করে। তাই এসব থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। খারাপ কনটেন্ট পোস্ট করে এমন একাউন্ট ব্লক করে দিন। পরিবারের সবার সামনে কনটেন্ট দেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। রাত জেগে ফোন দেখা বন্ধ করুন। এটি কাম বাসনা দূর করার উপায় হিসেবে অন্যতম।
কাম বাসনা থেকে মুক্তির উপায়
রোজা রাখুন
রোজা আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কাম বাসনাকে কমিয়ে দেয়। মহানবী (সা.) বলেছেন:- “হে যুবক! তোমাদের মধ্যে যার বিয়ে করার সামর্থ আছে সে যেন বিয়ে করে নেয়। আর যার সামর্থ নেই, সে যেনো রোজা রাখে, কেননা তা হচ্ছে তার জন্য আত্মসংযমের উপায়।” (বুখারী ও মুসলিম)
নিয়মিত নামায আদায় করা
নিয়মিত নামাজ আদায় করলে মন ও শরীর বিশুদ্ধ থাকে। আল্লাহর ভয় ও তাকওয়া মনে থাকলে কোনো খারাপ চিন্তা মনে আসে না। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:- ” নিশ্চয়ই নামায অশ্লীল ও মন্দ চিন্তা থেকে বিরত রাখে।” ( সূরা আল-আনকাবুত ৪৫)
দোয়া ও ইস্তেগফার
নবি করিম (সা.) কামবাসনা দমনে আল্লার কাছে দোয়া করতে বলেছেন। তিনি নিজেও আল্লাহ কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন। আমাদেরও উচিত কামবাসনা দূর করতে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া ও ইস্তেগফার পড়তে হবে। দোয়াটি হলো:- ” আল্লাহুমা ইন্নি আউযু বিকা শাররি সাম’ই মিন শাররি বসারি ও মিন শাররি লিসানী ও মিন শাররি কালবি ও মিন শাররি মানিয়্যি।” অর্থ:- হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় চাই৷ আমার কান,চোখ,জিহ্বা,অন্তর এবং যৌনাঙ্গের খারাপ দিক থেকে।
কামবাসনা দূর করার মন্ত্র
কাম বাসনা দূর করার উপায় হিসেবে কিছু মন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। হিন্দু ধর্মে মনকে শান্ত করার ও নেতিবাচক চিন্তা দূর করার কিছু মন্ত্র রয়েছে। যা আমাদের মনকে শান্ত করে কামবাসনা কমাতে সাহায্য করে।
গায়ত্রী মন্ত্র: “ওঁ ভুর ভুবঃ স্বঃ তৎসবি Dুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো Dয়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।”
কামদেব মন্ত্র: “ওঁ ক্লিং কামদেবায় নমঃ।”
ওঁ শান্তি মন্ত্র: “ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।
বিয়ে করা
কাম বাসনা দূর করার উপায় হিসেবে বিয়ে করা সবচেয়ে কার্যকরী সমাধান। যদি কারো সামর্থ থাকে তাহলে বিয়ে করে নেয়া উত্তম। বিয়ের মাধ্যমে কামবাসনা হালাল পথে পরিচালনা করা বুদ্ধিমানের কাজ। তাই উপযুক্ত বয়সে বিয়ে করা সবার জন্য উত্তম।

আমাদের আজকের আয়োজন ছিলো কাম বাসনা দূর করার উপায় বা কাম বাসনা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে। অতিরিক্ত মাত্রায় কাম বাসনা সমাজের জন্য হুমকি স্বরুপ। কাম বাসনা মানুষকে অন্যায় ও পাপ কাজ করতে উৎসাহিত করে। অনেকে কাম বাসনার জন্য মারাত্মক পাপ করে বসে। তাই সবার উচিত নিজের কাম বাসনাকে নিয়ন্ত্রণ করা। উপরের পদ্ধতি অবলম্বন করে খুব সহজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। কাম বাসনার পাপ সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।
ponamas।পোনামাছ। কাম বাসনা দূর করার উপায়। কাম বাসনা থেকে মুক্তির উপায়। কাম থেকে মুক্তির উপায়। কাম বাসনা দূর করার মন্ত্র।
ছবি সংগ্রহীত।