পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি হলে করনীয়

পিরিয়ড একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। পিরিয়ড ৩৫ দিনের পর বা ২১ দিনের আগে হলে এবং ৭ দিনের বেশি বা ৩ দিনের কম স্থায়ী হলে তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড বলে। আমাদের আজকের আয়োজন পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি হলে করনীয়। যেকোনো বয়সী নারীর অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে। নারীদের ২৮ দিন পরপর পিরিয়ড হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। সাধারণত নারীদের পিরিয়ড চলে ৩-৭ দিন পর্যন্ত তবে কারো ৭ দিনের বেশি পিরিয়ড স্থায়ী হলে তা অবশ্যই চিন্তার বিষয়।অনেকদিন ধরে পিরিয়ড স্থায়ী হওয়াকে বলা হয় মেনোরেজিয়া। চলুন জেনে নেই, পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি হলে করনীয় কি?

পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি হলে করনীয়

  1. মানসিক চাপ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করুন। মানসিক চাপের ফলে মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক দেখা যায়।
  2. অনিয়মিত পিরিয়ডের সময় পরিমাণমতো বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। বিশ্রামের ফলে হারিয়ে যাওয়া শক্তি পুনরায় ফিরে আসে।
  3. স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করুন। পুষ্টিহীনার কারনে পিরিয়ডের তারতম্য দেখা যায়।
  4. হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করুন। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা অনিয়মিত পিরিয়ডের জন্য দায়ী।
  5. অ্যালকোহলের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। অনিয়মিত পিরিয়ডের সময় অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
  6. পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি হলে করনীয় হিসেবে প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। প্রচুর পানি পান করলে পিরিয়ডের সমস্যা গুলো আস্তে আস্তে কমতে নাকি।
  7. স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। নিয়ম মেনে জীবন যাপনের চেষ্টা করতে হবে।
  8. পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি বা ১০ দিন হলে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। এই অনিয়মিত পিরিয়ড যদি একাধিক বার হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। নয়তো বড় কোনো সমস্যা হতে পারে।
পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি হলে করনীয়
পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি হলে করনীয়

৭ দিনের বেশি পিরিয়ড চললে এবং অতিরিক্ত রক্তপাত হলে অ্যানিমিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আয়রন ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খান এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

এ সময় কাজকর্ম থেকে বিরত থাকবেন। জোর করে কোন কাজ করবেন না বিশ্রাম নিন। এ সময় ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন।

এ সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এছাড়াও বারবার স্যানিটারি পন্য পরিবর্তন করুন। এ সময় ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন। মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন এবং অতিরিক্ত উদ্যোগী হয়ে উঠবেন না। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

অনিয়মিত পিরিয়ড কি

পিরিয়ড হওয়ার কিছু সময় সীমা আছে। এটা সাধারন ২৮ দিন হিসেবে ধরা হয়। এক পিরিয়ড হওয়ার পর আরেক পিরিয়ড হতে সাধারনত ২৩ দিন থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত সময় নিয়ে থাকে। পিরিয়ড হওয়ার হওয়ার পর ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত থাকে। এটাকেই বলা হয় স্বাভাবিক বা নিয়মিত পিরিয়ড। তবে কোনো কারণে পিরিয়ডে সময় ৭ দিনের বেশি তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড বলা হয়। কোনো কারনে ২৩ দিনের আগে ও ৩৫ দিনের পর পিরিয়ড হলে তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড বলা হয়। আবার পরিয়ড যদি ৭ দিনের বেশি ১০-১৪ দিন থাকে তাকেও অনিয়মিত পিরিয়ড বলে।

অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার কিছু কারণ :-

  • মাত্রা অতিরিক্ত শরীরচর্চা
  • শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ
  • থাইরয়েডের সমস্যা
  • হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
  • জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহার
  • জরায়ুর টিউমার
  • হরমোনের তারতম্য
  • সন্তানকে দুধ দান।
পিরিয়ড
পিরিয়ড

অনিয়মিত পিরামিড নিয়মিত করার উপায়

  1. অনিয়মিত মাসিককে নিয়মিত করতে টকজাতীয় ফল যেমন : জলপাই, মাল্টা, তেঁতুল ইত্যাদি খেতে পারেন। এসব ফল মাসিক নিয়মিত করতে সাহায্য করে। এজন্য চিনি মেশানো পানির সাথে তেঁতুল ভিজিয়ে রাখুন। এক ঘন্টা পর এর সাথে লবন ও জিরা মিশিয়ে নিন। এই পানীয় টি দিনে দুই বার পান করলে ভালো উপকার পাবেন।
  2. অনিয়মিত পিরিয়ডকে নিয়মিত করতে আদা বেশ কার্যকরী। এজন্য এক কাপ পানিতে ১/২ চা চামচ আদা কুচি সিদ্ধ করে নিন। দিনে দুই বার নিয়মিত একমাস খেলে মাসিক নিয়মিত হয়ে যাবে।
  3. মাসিক নিয়মিত করতে কাঁচা পেঁপে খেতে পারেন। যা মাসল ফাইবার কন্ট্রাকশনে সাহায্য করে। নিয়মিত কয়েক মাস কাঁচা পেঁপে এর রস খেলে মাসিক নিয়মিত হয়ে যায়।
  4. অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়মিত করতে অ্যালোভেরা জেল বেশ কার্যকরী। অ্যালোভেরা জেল হরমোন রেগুলেশনে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে অ্যালোভেরা জেল মধুর সাথে খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
  5. পিরিয়ডের সমস্যা সমাধানের জন্য নিয়মিত শাকসবজি ও ফল মূল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। গাজর, পুদিনা পাতা, করলা, ভিটামিন সি জাতীয় খাবার আমাদের হরমোন রেগুলেশনে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি আঙুরও খেতে পারেন।
  6. সাধারণত আমাদের শরীরের ব্যালেন্স নষ্ট হওয়ার কারণে অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে। হরমোনের তারতম্য সমাধানে যোগ ব্যায়াম খুব উপকারে। নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করলে আমাদের শরীরের প্রতি কন্ট্রোল থাকে। যোগ ব্যায়াম ও মেডিটেশন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
  7. পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি স্থায়ী হলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি হলে করনীয়
পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি হলে করনীয়

আশা করি পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি হলে করনীয় সম্পর্কে আপনারা বুঝতে পেরেছেন। লজ্জা না পেয়ে স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠুন এবং সুস্থ জীবন যাপন করুন। আমাদের আজকের আয়োজন ছিলো পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি হলে করনীয় সম্পর্কে। একবার মাসিক দেরিতে হলে বা একটু দীর্ঘ সময় থাকলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে একটানা তিন মাস বা তার বেশি পিরিয়ডে সমস্যা দেখা গেলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

আরও পড়ুন:- গলা ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

ponamas। পোনামাছ। পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি হলে করনীয় কী। অনিয়মিত পিরামিড নিয়মিত করার উপায়।

ডা. সাহানারা চৌধুরী।

ছবি সংগ্রহীত।

Leave a Comment